অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

~ ~ হামটা পাস ট্রেকরুট ম্যাপ ~ হামটা পাস ট্রেকের আরও ছবি ~

"পাথর অপেক্ষা করে শুকনো নদী খাতে।
আবার অতল এসে কোনদিন ধুয়ে দিয়ে যায় যাতে
সমস্ত জমে থাকা রাগ-অভিমান আর গ্লানি
সেরকম আমিও ঠিক জানি...।

কোন এক পড়ন্ত বিকেলবেলা দূরে
সমস্ত পাহাড়-কুয়াশা-গাছ-মেঘ ঘুরে
আমি ঠিক ফিরে যাব আবার তোমার কাছে
নদীদের যতখানি পাথর, শ্যাওলারও ততখানি আছে।"

- আমার প্রিয়তম সহোদর উত্তরণ , রোপা, হিমাচল

১৮ জুন ২০১৬, সন্ধে ৫.৫০, রিজার্ভ ফরেস্ট এরিয়া, মানালি... "প্রথম টিম ব্রিফিং"...

"হাই দিস ইজ সৌম্যজ্যোতি মিত্রা অ্যান্ড দিস ইজ হৃষিকেশ দেশপান্ডে, ইওর ট্রেক লিডার কাম কম্পেনিয়ন ফর দি নেক্সট ফাইভ ডেজ...ইউ ক্যান কল মি SJ"। ছ' ফুটের উপর লম্বা, মেদহীন ছিপছিপে চাপদাড়ির সৌম্যকে ভালো লেগে গেল প্রথম দেখাতেই। আর হৃষিও একই রকম শান্ত অথচ স্নিগ্ধ নেতাসুলভ ব্যক্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল পাশে। আমাদের গ্রুপ বেশ বড়, সব মিলিয়ে ২৫ জনের। তার মধ্যে আমি আর নীলাদ্রি ছাড়াও বাঙালি আরও তিনজন। একে একে শুরু হল পরিচয় পর্ব। দেখা গেল আমাদের এই পাঁচ বাঙালি ছাড়া শুধুমাত্র হাই অল্টিটিউড ট্রেক-এর অভিজ্ঞতা আছে বছর পঁয়তাল্লিশের মুম্বইকর নিখিল এর (একমাত্র রুপিন পাস)। বলা হয়নি, এইবারের ট্রেক আমাদের নিজেদের অর্গানাইজ করা নয়। এবার এসেছি 'ইন্ডিয়াহাইক' (IH) এর সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানেরও শুরু এক বাঙালির হাত ধরে, অর্জুন মজুমদার। ওনারই ব্যক্তিগত বন্ধু ডক্টর কুণাল মাইতি আমাদের টিম ডক্টর এবারের ট্রেক-এ। ডাক্তারবাবুকে দেখে অবাক হতে হয়। এই ষাট বছরের যুবকের উদ্যম এবং অভিজ্ঞতা সত্যি ঈর্ষণীয়। ওনার বাকি দু'জন পার্টনারের গল্প ক্রমশ প্রকাশ্য। সন্ধে ঘনিয়ে আসছে, পাইনের বনে পাতার গা বেয়ে আস্তে আস্তে নেমে আসছে অন্ধকার। বাতাসে হাল্কা ঠান্ডার আমেজ। কাল সকাল সাতটায় শুরু হতে চলেছে আমাদের অভিযান। এতদিনের সব প্ল্যান এবং প্রতীক্ষার অবসান। জীবনের প্রথম পাস অতিক্রম করার উত্তেজনা শিরায় শিরায় অনুভব করতে করতে আমরা জঙ্গলের পথ ছেড়ে পা বাড়ালাম হোটেলের দিকে।

২০১৬-এর শুরুর দিকের কোনো একদিন... "ফ্ল্যাশব্যাক"...

হাইক মেসেঞ্জারের গ্রুপ নোটিফিকেশন দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। আমাদের 'পদাতিক' ট্রেকিং গ্রুপের চ্যাটবক্সে সৌনীপ লিখেছে, এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়ায় এই বছরের ট্রেকিং ওকে স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে। ততদিন অবধি আমরা প্রথমে 'ভাবা পাস' (পিন-পার্বতী ভ্যালি) ক্যান্সেল করে হামটা পাস করা মনস্থির করে ফেলেছি। ইন্ডিয়াহাইকের বুকিং করা ছিল তিনজনেরই। ভীষণ মনখারাপ সঙ্গে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন অফিস পৌঁছে দেখি নীলাদ্রিরও মুখে ঘন কালো মেঘের ছায়া। বরুণদা'র (চা-ওলা) দিয়ে যাওয়া কাগজের চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ও উঠে এল আমার উল্টোদিকের চেয়ারে। "দেখ অভিষেক, সামনেই বিয়ে এরপর কি পরিস্থিতি থাকবে ঠিক নেই, চল আমরাই দুজনে যাই।" মনখারাপ আর আশঙ্কা সঙ্গে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পর, সৌনীপের অনুমতি নিয়ে প্ল্যান ফাইনাল হয়ে গেল। এবার তাহলে দু'জনেই, সঙ্গে নতুন কিছু অচেনা মানুষ। দিন গোনা চলতে থাকল আপন গতিতে।

১৪ জুন, রাজধানী এক্সপ্রেস আর... "হাফ পদাতিক"...

রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি যাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে। নিজেকে কেমন একদিনের রাজা রাজা মনে হয়। মনে হয় যেন কোনও কালো স্প্যানিশ স্ট্যালিয়ন-এর পিঠে চড়ে এগিয়ে চলেছি দুরন্ত গতিতে, হাওয়াকে পাশ কাটিয়ে, চারিদিকের সবুজকে চক্ষের নিমেষে বিদায় দিয়ে নতুন কোনও অজানার সন্ধানে। আমাদের সিট প্রতিবারের মতোই এবারও ঠিক দরজার ধারে সাইড আপার আর সাইড লোয়ারে। প্রতিবারের মাথায় গুঁতো খাবার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে ঠিক করেই নিলাম উল্টোদিকে মাথা করে শোব। একটা জিনিস দেখতে পেয়ে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। দরজার ঠিক মাথার উপরে লাগানো ডিসপ্লে বোর্ড। যাতে দেখা যাচ্ছে ট্রেনের গতিবেগ। মাঝে মাঝে ট্রেন যখন ১০০ কিমি/ঘন্টা ছাড়াচ্ছে, গতির একটা আনন্দময় রোমাঞ্চ বয়ে যাচ্ছে শরীরে। হয়তো অনেকের কাছেই আমার এই অনুভূতিগুলো ছেলেমানুষি মনে হবে, কিন্তু কিছু কিছু জিনিসে আমি সত্যি এখনও এক্কেবারেই ছেলেমানুষ। একে একে চা, স্যুপ আর কাঠি-বিস্কুট শেষ করে সিটে গা এলিয়ে দেওয়া গেল। ডিনারও এসে গেল যথাসময়। মুরগির ঠ্যাং গুঁড়ো করে আর আইসক্রিমের কাপ-এর পিঁপড়ে-কাঁদা অবস্থা করে নিশ্চিন্তে কম্বল চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

সকালবেলা পেপার-ওলা খোঁচা মেরে ঘুম ভাঙাল। একটু পরে চা আর ব্রেকফাস্টও হাজির। ব্রেড-অমলেট-ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-লাড্ডু আর কফি দিব্যি সেঁধিয়ে গেল পেটে। বাকি প্যাকেজড ড্রাইফুড স্থান পেল রুকস্যাকে। যমুনা ব্রিজের উপর দিয়ে যাবার সময় অক্ষরধাম একবার দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। ঠিক সময়েই পৌঁছে গেলাম দিল্লি, পিঠে পেল্লায় রুকস্যাক আর কাকের বাসার মতো চুলওয়ালা দুই খেপা পাহাড়-প্রেমিক, নীলাদ্রি আর অভিষেক - "হাফ পদাতিক" (ও 'পদাতিক' কী যারা জানেন না তাদের জন্য বলি ওটি আমাদের চার জন বন্ধুর সাধের ছোট্ট ট্রেকিং গ্রুপ)।

১৫ জুন, "অক্ষরধাম আর দিল্লি কি দিল"...

নুন ছাড়া যেমন রান্না জমে না, তেমনই অপেক্ষা ছাড়া ভ্রমণকাহিনি জমে না। হামটা পাসের গল্প বলার আগে তার পার্শ্বচরিত্রগুলো একটু ফুটেজ খেলই বা নাহয়, ক্ষতি কী? সকাল সকাল দিল্লিতে নেমেই আমাদের আশঙ্কা হল কোথায় থাকা যায়। পাহাড়গঞ্জ জায়গাটায় থাকতে বেশ ভয় ভয় লাগে। এলাকা হিসেবে সুনাম তো প্রচুর! কী-করি কী-করি ভাবতে- ভাবতে এদিক-ওদিক হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ করে ভিড়ের মাঝখান থেকে একজন মাঝবয়সি ছোকরা উদয় হল। "বাঙালি স্যার?খুব ভালো নতুন হোটেল হয়েছে স্যার আমাদের, একদম ঝক্কাস...চলুন না স্যার দেখবেন। পছন্দ না হলে নেবেন না।" দু'জনে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে ঠিক করলাম, যা থাকে কপালে, দেখে তো আসি। মেন রোড থেকে হেঁটেই চলেছি। মিনিট পাঁচেক পর ছেলেটা একটা সন্দেহজনক গলির দিকে ইঙ্গিত করে বলল -"আসুন স্যার এদিকে।" ভয়ে ভয়ে ওর পিছন পিছন ঢুকে দেখলাম সত্যি এক নতুন হোটেল। নামটা দেখে মনে আরও একটু ইয়ে হল, হোটেল 'ইউ অ্যান্ড মি।' কী আর করা ভিতরে ঢুকে পড়লাম। ঘর দেখে সত্যি ভালো লেগে গেল। ১০০০ টাকায় ডাবল বেড, কিন্তু খুব সুন্দর। রাজি হয়ে গেলাম। স্যাক নামিয়ে গা-হাত-পা এলিয়ে দিলাম দুধ সাদা বিছানায়। বাড়তি পাওনা দুর্দান্ত স্পিডের ফ্রি ওয়াই-ফাই।

হোটেলের কুকটিরও রান্নার হাত খাসা। বিকেলে প্রোগ্রাম ছিল আমাদের প্রিয় বন্ধু অভিষেক (আমি নই) আর পর্ণার (ওরা বেশ কিছুদিন হল নিজেদের সংসার পেতেছে) সঙ্গে আমার প্রিয় অক্ষরধাম মন্দির ঘোরার। ওদের লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের প্রোগ্রামটা দুর্দান্ত হয়। আবার নাকি জিনিসটা নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে যেটায় বাচ্চারা লাইভ পারফর্ম করছে। দেখার ইচ্ছেটা বড়োই প্রবল হয়ে উঠেছিল। হাল্কা একটা ঘুম দিয়ে আমরা রিক্সা ধরে রওনা দিলাম কাছের মেট্রো স্টেশন 'রামকৃষ্ণ আশ্রম মার্গ'-এর দিকে। ওখান থেকে ব্লু-লাইনের নয়ডার দিকের মেট্রো ধরে পৌঁছে গেলাম 'অক্ষরধাম' স্টেশনে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দুই মূর্তি হাজির। অনেকদিন পরে দেখা হওয়ায় ভীষণ আনন্দ হল। হাঁটা দিলাম মন্দিরের দিকে। এই মন্দিরের সিকিউরিটি খুব কড়া। মানিব্যাগ ছাড়া কোনোকিছুই ভিতরে নিয়ে যেতে দেয় না। অগত্যা মোবাইল ইত্যাদি অভিষেকের ব্যাগে চালান করে প্রায় পঁচিশ মিনিট লাইনে অপেক্ষা করে ভিতরে ঢোকা গেল। এর আগে আমি দুবার এখানে এসেছি। এবারে আসার উদ্দেশ্য শুধু লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-টাই। অভিষেক যখন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছে, হঠাৎ করে আকাশ কালো করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। আমরা তিনজন মাঝারি ভিজে কোনোরকমে শেডে ঢুকলাম। অভিষেক বেচারা ওই অবস্থাতেই পুরো কাকভেজা হয়ে টিকিট কেটে আনল।

ঠিক ৭.৪৫ -এ প্রোগ্রাম শুরু হবে। এতক্ষণ ধরে দিনের আলো কলকাতায় দেখা সম্ভব নয়। বিশাল বড় অ্যাম্ফিথিয়েটারের মাঝখান জুড়ে অনেকটা চওড়া ফাউন্টেন প্লেস। তিনদিকে বসার সিঁড়ি। ভেজা সিঁড়িতেই কোনোরকমে বসা হল। এদিকে ভেজ পোলাও আর কোল্ড-ড্রিঙ্ক এসে হাজির। খাবার শেষ হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রোগ্রাম শুরু হল। সে কী অপূর্ব বর্ণচ্ছটা। উড়ন্ত জলের কুচি মুখ চোখ ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মোহগ্রস্তের মতো হাঁ করে গিলে চলেছি সেই অবর্ণনীয় আলো-শব্দের খেলা আর কাহিনির চিত্রকল্প। তার সঙ্গে সোনায় সোহাগা বছর দশ-বারোর কিছু অতীব নৃত্যকুশল বাচ্চার ছন্দময় প্রদর্শন। এ জিনিস ভোলার নয়, বারবার দেখলেও পুরোনো হবার নয়। শো শেষ হয়ে যাবার পরও হাততালির ঝড় থামতে সময় লাগল। নেশা যেন কাটছেই না, তবে এবার ফেরার পালা। বাইরে বেরিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় কফি খেয়ে মেট্রোর দিকে পা বাড়ালাম সবাই।

১৬ই জুন, বিকেল ৪টে..."চলা যাতা হুঁ কিসি কি ধুন মে..."

বিকেল ৬-টায় মানালি যাওয়ার ভলভো বাস। ছাড়ে হিমাচল ভবনের সামনে থেকে। রাতে ঘুম হবেনা আন্দাজ করে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নিলাম দুজনে। ৩.৩০ থেকেই হোটেল ছাড়ার তাগাদা দেওয়া শুরু হয়ে গেল। শেষমেশ তো ঘরের লাইট পর্যন্ত নিভিয়ে দিল। ৪-টে নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। নিউ দিল্লি স্টেশনের গেটে অপেক্ষা করছি আমাদের উবের-এর জন্য। মহান ড্রাইভারকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছেনা আমাদের লোকেশন। অবশেষে তিনি এলেন। মিনিট কুড়ি সময় লাগল মান্ডি হাউস পৌঁছোতে। এর আগে কখনও সারারাত বাসে ট্রাভেল করিনি। মনে মনে একটা উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। সব থেকে চিন্তা হচ্ছিল টয়লেট করা নিয়ে। হিমাচল ট্যুরিজমের এই এসি ভলভোগুলো ভীষণ আরামদায়ক, কিন্তু এই চোদ্দো ঘন্টার দীর্ঘ বাস জার্নিতে মাত্র দুটো স্টপ; একটা রাতের খাবার আর একটা ভোরবেলার চা। আতঙ্কের বহর আরও বাড়িয়ে দিয়ে কন্ডাক্টর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেল একটা করে এক লিটারের জলের বোতল আর দুটো করে বমি করার ব্যাগ।

বাস ছুটছে হু-হু করে। হাইওয়ের ধারের সন্ধেবেলার জনজীবন কেমন একটা ঘোরলাগা মাদকতা এনে দেয়। ধাবার সামনে পরপর দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্যাটার্নে সাজানো রঙিন টিউবলাইটের সারি, খাটিয়া, বড়ো বড়ো টায়ার-টিউবের দোকান, আলো ঝলমলে পেট্রোল-পাম্প, উল্টোদিক থেকে ধেয়ে আসা হেডলাইটের আলো আর আস্তে আস্তে বাড়তে বাড়তে তীব্র হয়ে আবার দূরে মিলিয়ে যাওয়া হর্নের শব্দ, সব মিলিয়ে একটা কোথাও যাচ্ছি-যাচ্ছি আনন্দ। কখন যে দুজনে গল্প করার টপিক হারিয়ে ফেলে বাসের জানালায় মনোনিবেশ করেছি নিজেরাই ভুলে গেছি। একটানা ঘণ্টাচারেক চলার পর বাস এসে থামল অনবদ্য এক থ্রি-স্টার মোটেল-এর সামনে, 'Motel Golden SARAS' । বাস থেকে নেমেই চক্ষু ছানাবড়া। পকেটের অবস্থা কল্পনা করে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। এদিকে খিদেও পেয়েছে খুব, খেতেও হবে। আর কোন অপশন নেই দেখে ঢুকে পড়লাম। ক্যাশ না থাক ক্রেডিট কার্ড-তো আছে। মেনু-কার্ড দেখে সত্যি অবাক হলাম। খাবারের দাম খুবই রিজনেবল। বোঝাই গেল কেন সবাই এখানেই খায় বাস থেকে নেমে। দুজনে মিলে এক প্লেট ভেজ চাউমিন নিয়ে অতি কষ্টে শেষ করতে পারলাম, পরিমাণ যথেষ্টই। খাওয়া শেষে টয়লেট ঘুরে এসে বাসে উঠে পড়লাম। কন্ডাক্টর মশাই বলে গেলেন রাত দুটো নাগাদ পাহাড়ি রাস্তা শুরু হবে, সবাই ঘুমিয়ে পড়ুন। বাস আবার থামবে পাঁচটার সময়।
রাত পৌনে দুটো নাগাদ এক নির্জন পাহাড়ি বাঁকে বাস দাঁড়িয়ে পড়ল। আধাঘুমন্ত আমরা জেগে উঠে নড়েচড়ে বসলাম। মনে উৎকণ্ঠা। রহস্য উদ্ধার হল এক মিনিটের মধ্যেই। পাশেই একটু উঁচুতে HPTDC – এর গেস্ট হাউস। এইখানে এসে ড্রাইভার চেঞ্জ হয়। ব্যাপারটা বুঝতে পারার পর পালস বিট নর্মাল হয়ে গেল। রাতের খাবার একটুও হজম হচ্ছে না। এসি বাসে পাহাড়ি রাস্তার বাঁক ঘোরায় শরীরে একটু অস্বস্তি শুরু হল। এতবার পাহাড়ে গিয়েও যা আমার কোনদিন হয়নি। ভোর সাড়ে তিনটের পর প্রকৃতির ডাক উপেক্ষা করা দায় হয়ে দাঁড়াল। ঠান্ডা এসির মধ্যে আধো জাগা অবস্থায় প্রায় পাঁচ ঘন্টা কাটানোয় অবস্থা শোচনীয়। তার ওপর বমিভাব এড়াতে বেশ কয়েকবার জল খেতে হয়েছে। ভোরের আলো ফুটব ফুটব করছে এরকম অবস্থায় পৌনে পাঁচটা নাগাদ বাস দাঁড়াল এক ক্যাফেটেরিয়ায়। নেমেই হাল্কা হতে ছুটলাম। মাঝারি ঠান্ডা বাতাস গাল-কপাল ছুঁয়ে গেল। পনের মিনিট ব্রেক দিয়ে বাস আবার ছুটল গন্তব্যের দিকে। একে একে ভুন্টার, কুলু পেরিয়ে মানালি বাস স্ট্যান্ডে যখন নামলাম ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটা ছুঁয়েছে।

১৭ জুন, মানালি, "উলটপুরাণ"...

বাস থেকে নেমে মালপত্র কালেক্ট করতে মিনিট পনেরো সময় লাগল। সকালের মিঠে রোদ আর আলতো ঠান্ডার মিশেল একটা মন ভালো করা আমেজ এনে দিল। বাসস্ট্যান্ড লোকে লোকারণ্য। আমরা হোটেলের খোঁজে ম্যালের দিকে এগোলাম। ধারণা ছিল এই সময় অফ সিজন চলবে। এখনকার দিনে অফ সিজন বলে যে আর কিছু হয় না সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। ম্যাল চত্বরে আমাদের থাকার মতো কোনো হোটেল পেলাম না। হয় একেবারে অখাদ্য ব্যবস্থা নয়ত খুব বেশি ভাড়া। অনেক খুঁজে একটু ভিতরের দিকে একটা হোমস্টে গোছের পাওয়া গেল। দিব্য ব্যবস্থা। শুধু গিজারটা চলে না আর টিভিতে ছবি আসে না এই যা। আমাদের তখন 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' অবস্থা। এখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। সকাল থেকে খাওয়া জোটেনি, এদিকে বেলা প্রায় এগারটা বাজে। তিন ঘন্টা রাস্তায় ঘুরেছি ভারী স্যাক আর ন্যাপস্যাক কাঁধে। ঠান্ডা যেন উধাও হয়ে গেছিল। ঘরে ফ্যানের অভাব টের পাচ্ছিলাম। ঠান্ডা জলেই স্নান করতে অসুবিধে হল না। এবার পালা খাদ্যসন্ধানের।

দুপুরে ম্যাল রোডের এক পাঞ্জাবি হোটেলে ভরপেট খেয়ে জম্পেশ ঘুম দিলাম দুজনে। আজ কিছুই করার নেই। আমাদের ট্রেকের গ্রাউন্ড কো-অর্ডিনেটর পূজা হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছিল আগামীকাল সকালে টিম ব্রিফিং হবে হিড়িম্বা টেম্পলে। আগে থেকে জায়গাটা দেখে রাখা ভালো এই ভেবে বিকেলবেলা বেরিয়ে পড়লাম। বাজারে লোকজন বলল হেঁটেই যাওয়া যায়। আমরা ভাবলাম ভালোই! ট্রেকের আগে একটা 'পা-মকশো' করে নিই। আধাঘন্টা হেঁটে বেশ কিছু সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছে গেলাম মন্দির প্রাঙ্গণে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রচুর জনসমাগমে মন্দিরচত্বর সরগরম। আমরা বেশ কিছু ছবি তুলে আস্তে আস্তে ফেরার পথ ধরলাম যখন, সামনের পাইনের বন ঝুপসি কুয়াশায় মুখ ঢাকতে ব্যস্ত। ম্যাল চত্বরে একটু ঘোরাঘুরি আর সন্ধে সাড়ে আটটার একটু পর রুটি আর ডিমের তরকারি দিয়ে ডিনার সেরে পা বাড়ালাম ডেরার উদ্দেশ্যে।

১৮ জুন, বিকেল ৫টা... "ইটস টাইম টু মিট দি আদারস"

ম্যালে বসে আছি দুজনে। সকালের গ্রুপ নোটিফিকেশনে জানলাম যে টিম ব্রিফিং বিকেল ছটায় ফাইনাল করা হয়েছে কারণ সব ট্রেকাররা এসে পৌঁছোতে বিকেল হয়ে যাবে। সারাদিন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি আর অল্প কেনাকাটি সেরে দুজনে অপেক্ষা করছিলাম বিকেল হবার। এর আগে আমরা কখনও এত বড়ো গ্রুপের সাথে ট্রেক করিনি। বুঝতে পারছিলাম না মানিয়ে নিতে পারব কিনা। আমাদের নিজস্ব পথচলার আলাদা আনন্দ আর নিয়ম কানুন আছে। সেগুলো থেকে বঞ্চিত হতে চাইছিলাম না। অবশেষে সময় উপস্থিত বাকিদের দেখে নেওয়ার। উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম মিটিং প্লেসে। সাড়ে পাঁচটায় ফোন বাজল, নেহেরু স্ট্যাচুর সামনে পৌঁছে যাওয়ার অনুরোধ। দু মিনিটেই পৌঁছে গেলাম। ইন্ডিয়াহাইকের লোগো দেওয়া টি-শার্ট দেখে এগিয়ে গেলাম। সৌম্যদর্শন ট্রেক লিডার জানাল তার নামও সৌম্য, সৌম্য মিত্র। ট্রেকিং থাকবে বাঙালি থাকবে না, হয় না। বেশ কয়েকটা ফোনালাপের পর আদেশ এল ফলো দি লিডার। হ্যামলিনের বাঁশিওলাকে ফলো করে আমরা ইঁদুরেরা চললাম মানালি রিজার্ভ ফরেস্ট ক্যাম্পের দিকে।

বিকেল ৫.৫০, মানালি রিসার্ভ ফরেস্ট এরিয়া...

"হাই দিস ইজ সৌম্যজ্যোতি মিত্রা অ্যান্ড দিস ইজ হৃষিকেশ দেশপান্ডে, ইওর ট্রেক লিডার কাম কম্পেনিয়ন ফর দি নেক্সট ফাইভ ডেজ...ইউ ক্যান কল মি SJ"। আমাদের প্রথম টিম ব্রিফিং শুরু। বিকেলবেলার পড়ন্ত রোদ পাইন পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে যাচ্ছে। একটা বড়ো সার্কেল বানানো হয়েছে। গোটা টিমের দু-তিন জন বাদ দিয়ে সবাই এসে পৌঁছতে পেরেছে। সাথে একজন অতিরিক্ত মেম্বার জুটে গেছে। লোমশ পাহাড়ি নেড়ি কুকুর একটা। কাছে এসে সবার গা শুঁকে যাচ্ছে। পাথরের ওপরে দুই ট্রেক লিডার বসে। সবার আগে প্রত্যেকের ইন্ট্রো দেওয়ার পালা। দেখা গেল আমরা দুজন ছাড়া আরও তিনজন বাঙালি। টিম ডক্টর কুণালবাবুর কথা আগেই বলেছি। সাথে এস.বি.আই.-এর গৌতমদা আর পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের শশাঙ্কদা। এই তিনজন বলা যায় প্রো-লেভেলের, আগে অন্তত চার-পাঁচটা বড়ো হাই অল্টিটিউড ট্রেকের অভিজ্ঞতা ওদের। বাকি কারোরই হাই অল্টিটিউড ট্রেকের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই সেভাবে, আমরা দুজন ছাড়া। তবে সবাই বেশ চনমনে আর ফিট। সৌম্যদা আর হৃষিকেশ একে একে পুরো ট্রেক আইটিনারি এবং পথের বর্ণনা দিল। কবে কোথায় কীভাবে ক্যাম্প করা হবে তার ডিটেইল প্ল্যানিং শোনাল। বেশ একটা এক্সপিডিশন গোছের ফিলিং আসছিল আমার। বেরিয়ে পড়ার জন্য তর সইছে না যেন। দিনের আলো নিভতে বসেছে। প্রায় অন্ধকার বনে আমরা কজন ঠান্ডার হালকা আমেজ মাখতে মাখতে একে অপরকে চিনে নিচ্ছিলাম। শেষ মুহূর্তের কিছু দরকারি ট্রেক গিয়ার কেনাকাটা করল কিছু ট্রেকার। এবার ফেরার পালা। কাল ঠিক সকাল সাতটায় নেহেরু স্ট্যাচুর সামনে দেখা করা ঠিক হল। একঝাঁক হ্যান্ডশেক আর শুভেচ্ছা বিনিময় দিয়ে বিদায় জানিয়ে মানালি ম্যালের জনসমুদ্রে মিশে গেলাম। ত্রয়োদশীর চাঁদ আমাদের সঙ্গে হেঁটে হোটেল অবধি পৌঁছে দিল।

১৯ জুন, সকাল ৬.৩০, "ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড"...

সব রেডি। স্যাক গোছানো শেষ। শেষবারের মতো ঘরে চোখ বুলিয়ে মা দুর্গার নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাড়িতে আর খবর দেওয়া যাবে না এর পর থেকে । তাই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই মা বাবার সঙ্গে কথা বলে নিলাম ভালো করে। জানি বাবার মুখ ভার হচ্ছে বাড়িতে। কী আর করা যাবে। ভোরের মিঠে রোদের উষ্ণতা চাখতে চাখতে পায়ে পায়ে এসে পড়া গেল নেহেরু স্ট্যাচুর সামনে। পেটের ভিতর গুড়গুড় করছে, এই জিনিসটা সব ট্রেকের শুরুতেই হয় আমার। অজানা আনন্দ, কী-হবে কী-হবে ভাবনার কৌতূহল আর ভয়মেশানো পেট খালি-খালি অনুভূতি। অনেকেই এসে গেছে, তবে সবাই নয়। কিছু টিম মেম্বারকে পিক আপ করা হবে যাওয়ার পথে Manali Zostel থেকে। এখন আমাদের গন্তব্য বেসক্যাম্প জোবরা (Jobra)। সেখানে ব্রেকফাস্ট সেরে ঘন্টা তিনেকের ট্রেক করে আজকের ক্যাম্প জ্বারা (Jwara)। এই বেলা ট্রেক রুটটা সবাইকে জানিয়ে রাখা দরকার।

আজ আমাদের প্রথম ক্যাম্পসাইট জ্বারা (Jwara) পৌঁছোতে অল্প সময় লাগার কথা। প্রথম দিন তাই সবাই রিল্যাক্সড মুডে নিজেদের আপন গতিতে হাঁটছে। সৌম্যদা বলে দিয়েছে "অভি তোমার দায়িত্ব ভালো ছবি তোলার, মনে থাকে যেন।" একটা জিনিস বলা হয়নি। ইন্ডিয়াহাইকের একটা খুব দামি এবং পিঠ চাপড়ানোর মতো উদ্যোগ আছে যার নাম 'Green Trail Initiative।' আমাদের প্রত্যেককে একটা করে সবুজ রঙের বেল্ট দেওয়া সিন্থেটিক ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। যেটা কোমরে জড়িয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। এই ব্যাগের মধ্যে জমা করতে হবে জঞ্জাল, প্লাস্টিকের র‍্যাপার, রিসাইক্লেবল নন বায়ো-ডিগ্রেডেবল ওয়েস্ট। তারপর ক্যাম্পে পৌঁছে সেগুলো এক জায়গায় জমা করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সঙ্গে করে এবং রি-সাইকেল করা হবে। এই সব কিছুই আমাদের প্রিয় হিমালয়কে দূষণমুক্ত করার জন্য। আমরা হাঁটতে হাঁটতে যতটা সম্ভব জঞ্জাল কুড়োতে লাগলাম।
পাইনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। মোটামুটি সমান্তরাল বলা যায়। প্রথম ঘন্টায় চড়াই-উৎরাই তেমন নেই। মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে নাগচম্পা (Snake Lily) ফুলের ঝোপ। দেখতে একেবারে ফণা তোলা গোখরোর মত।

কচি পাইনের গন্ধ নাকে আসছে। দু'পাশের ঘন জঙ্গল ভেদ করে আমরা চলেছি লাইন করে, যেন খাবারের সন্ধানে কালো ডেঁয়ো পিঁপড়ের দল। কিছুটা চলার পর রাস্তা নেমে গেছে নদীর দিকে। তার উপর কাঠের সাঁকো। তীব্র খরস্রোতা নদী পেরিয়ে আমরা এক সমতল সবুজ বুগিয়াল দিয়ে হেঁটে চললাম নদীকে ডানদিকে রেখে। কিছুটা হলেও বোল্ডার ছড়িয়ে চলার পথে। দূরে চড়াই শুরু হয়েছে। এতই সুন্দর চারিদিকের প্রকৃতি যে বারবার পিছন ফিরে তাকাতেই হচ্ছে। ফেলে আসা পথের মায়া যেন কাটছেই না। বেশ কিছুটা চড়াই ভাঙার পর সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ল। সৌম্যদা বলল সামনে কিছুটা এগিয়েই বিশ্রাম করা হবে। জায়গাটার নাম 'চিখা'। এখানেই প্রথম প্রথম হামটা ট্রেক শুরু হবার পর ইন্ডিয়াহাইকের ফার্স্ট-ডে ক্যাম্প করা হত। কিন্তু এখন বদলে আরও একটু এগিয়ে 'জ্বারা'য় করা হয়েছে।

বসে থাকার ফাঁকে ক্যামেরাটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আবার একটু নিঃশ্বাস নিয়ে নিল। পেটটাও ঠান্ডা হল একটু চকলেট আর জল পেয়ে। পাগুলোও মনে মনে ধন্যবাদ দিল। এবার আর থামা নেই। একটানা চলতে হবে অনেকটা। আজ একটা বেশ বড় রিভার ক্রসিং আছে। সেটা পেরোলেই ক্যাম্প। এক পা দু'পা করে চড়াই ভাঙছি। পথ আটকে দাঁড়াচ্ছে বড় বড় বোল্ডার। এবারের ট্রেকে হাঁটতে সুবিধে হচ্ছে কারণ সাথে নতুন ওয়াকিং পোল। একটা ছোট্ট ঝরনা পেরিয়ে সরু একটা ট্রেইল উঠে গেছে প্রায় সত্তর ডিগ্রি ঢালে বোল্ডারের ফাঁক দিয়ে। উপায় নেই, স্টিকটাকে গুটিয়ে ছোটো করে পিঠের ন্যাপস্যাকে ঝুলিয়ে নিলাম। আমার হাইট কম, তাই আমার পক্ষে শুধু পায়ের ভরসায় ওঠা সম্ভব হল না। হাতে পায়ে ভর দিয়ে ওই ১০-১২ ফিট রক ক্লাইম্ব করতে হল।

বাকিদের দেখা যাচ্ছে দূরে। কেউ সামনে এগিয়ে কেউ পিছনে পড়ে আছে। একটা পনেরো বাজে। যথারীতি আকাশ গোমড়ামুখো হতে শুরু করেছে। হাওয়া বইছে মাঝারি। বেশ ঠান্ডা হাওয়া। পথের পাশেই একগাদা বিভিন্ন রঙের ছোটো ছোটো পাহাড়ি বুনো ফুলের গাছ। ঠান্ডা বাতাস যেন ওদের ঘুম থেকে ডেকে তুলছে আর ওরা মাথা নেড়ে বলছে 'লেটস প্লে'।

দেড়টা নাগাদ নদীর পাড়ে এসে পৌঁছোলাম। এসে তো তার গর্জন আর স্রোত দেখে বুকটা একবারের জন্য হলেও ছ্যাঁত করে উঠল। ভেবেছিলাম এপার-ওপার দড়ি লাগানো থাকবে ধরে-ধরে পেরোনোর জন্য। না, সেসব কিছুই নেই! জুতো খুলে সবে ব্যাগের সাথে বেঁধেছি, একেবারে প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। কোনোমতে প্যান্ট গুটিয়ে গায়ে রেনকোট চাপালাম। ওদিকে সৌম্যদা আর হৃষি তাড়া দিচ্ছে। একটা হিউম্যান চেন বানানো হল। প্রথমে আমাদের কো-গাইড সুনীল পেরিয়ে গেল কিছুটা। তারপর একে একে সবাই হাতে হাত মিলিয়ে পেরোতে শুরু করলাম। জলে পা দিতেই পা অসাড় হয়ে গেল। দু-তিন পা এগোতে না এগোতেই মনে হল আমার পা আর নেই হাঁটুর নীচ থেকে। এদিকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মনে হয় পাহাড়ের ওপরের দিকেও জোরালো বৃষ্টি হচ্ছিল। নদী চওড়ায় ১২-১৩ ফিটের বেশি নয়, কিন্তু ওটাই কয়েক মাইল মনে হচ্ছিল। আমার বাঁদিকে ছিল প্রিয়াঙ্কা আর ডানদিকে ধরে আছে হৃষিকেশ। হৃষির ডানদিকে আবার জুয়েল। জুয়েল-এর পা স্লিপ করছিল, এদিকে আমাকে টানছে প্রিয়াঙ্কা আর আমার বাঁদিকের বাকি সবাই। সে এক অদ্ভুত 'টাগ-অব-ওয়ার' পরিস্থিতি। হৃষি আর না পেরে বলল হাত ছেড়ে এগিয়ে যেতে। আমরা ডান থেকে বাঁয়ে ক্রস করছিলাম। ডান দিকের হাত ছেড়ে দিতেই পুরো ব্যালেন্স চলে গেল। হু-হু করে ছুটে আসা বরফ ঠান্ডা জলে অসাড় পা বিট্রে করল। পিছলে গিয়ে কোমর অবধি ডুবে গেলাম। এই উচ্চতার জলে পুরো ডুবে যাওয়ার ভয় নেই, কিন্তু হাইপোথার্মিয়ার ভয় অবশ্যই আছে। হৃষি আমার কাঁধ খামচে ধরায় সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে উঠতে পারলাম। শেষটুকু পেরিয়ে গেলাম নির্বিঘ্নে। হৃষিও বাকিদের নিয়ে এগোচ্ছিল। এদিকে নদীর জলের স্রোত বাড়ছে। জুয়েলের পরে নবীন আর তার পরে নীলাদ্রি। আমি এপারে এসে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে লাফঝাঁপ আর স্ট্রেচিং করে ব্লাড সার্কুলেশন চালু করার চেষ্টা করে যেতে লাগলাম। হঠাৎ মুখ নদীর দিকে করে দেখি পেরিয়ে প্রায় চলে আসার মুখে নীলাদ্রি ডিসব্যালেন্সড হল আর ওর বাঁ পা'টা পাথরে ঠুকে গেল। ওপরে উঠে আসতেই দেখি শিন বোনের উপর বেশ কিছুটা ছড়ে গেছে। সৌম্যদা বলল ক্যাম্পে গিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দেবে। ক্যাম্প দেখা যাচ্ছিল। ভেজা জামাকাপড় আর জুতো জলদি ছাড়তে হত। প্রায় দৌড়ে ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম। আমাদের দেখে হয়তো ভগবানেরও মায়া হচ্ছিল। আমাদের যেন পিছু ধাওয়া করে রোদও চলে এল গুটি গুটি পায়ে একটু উষ্ণতা ফেরি করতে।

বিকেল ৪.২০... "ইভনিং স্টোরিস"

বেশ ইচ্ছে করছিল একটু ক্যাম্প ফায়ার করতে। কিন্তু সেটা IH-এর নিয়মবিরূদ্ধ বলে জানাল সৌম্যদা। তাই সবাই গোল করে বসে গল্প শুরু করলাম। নিজেদের ট্রেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে করতে সন্ধে হয়ে এল। বিকেলের সামান্য মজাদার কিছু গেমস এবং স্ট্রেচিং সেরে সবাই স্যুপ খেয়ে ডিনার এর জন্য তৈরি হতে লাগলাম। ঠিক সাতটায় অতি উপাদেয় তরকারি এবং ডাল দিয়ে রুটি-ভাত এবং ডেসার্ট হাজির। ডাইনিং টেন্টের মধ্যে হেডল্যাম্পের আলোয় গরম খাবার গলাধঃকরণ করতে করতে মজাদার আড্ডা এবং হাসাহাসি চলতে লাগল। হট চকোলেটের কাপ হাতে নিয়ে বাইরে আসতেই ঠান্ডার কামড় মালুম পেলাম। কোনোমতে নিজেদের কাপ আর লাঞ্চবক্স ধুয়ে টেন্টে সেঁধিয়ে গেলাম। শোবার জন্য রেডি হয়ে গেছি প্রায়, বাইরে থেকে সৌম্যদা ডাকল। এখন হল অক্সিমিটার দিয়ে শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপার পালা। রিডিং ৮০ অবধি নরম্যাল। তার নীচে নামলে বিপদের আভাস। রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে 'অ্যাকিউট মাউন্টেন সিকনেস' (AMS)হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমার রিডিং দেখাল ৮৪ আর পালস রেট ৯০। নীলাদ্রির যথাক্রমে ৯০ আর ৮০। আমাকে বেশি করে জল আর ডায়ামক্স এর রেগুলার ডোজ খেতে বলে সৌম্যদা বিদায় নিল। প্রথম দিনেই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমের দিকে থাকায় একটু চিন্তা নিয়েই শুতে গেলাম। কাল আরও অল্টিটিউড গেন করার আছে। দেখা যাক কী আছে কপালে।

২০ জুন, ভোর ৬-টা... "কাম অন গাইজ ইওর টি ইজ হিয়ার"...

হাই অল্টিটিউডে আমার কোনোদিনও ভালো ঘুম হয় না। নরম স্লিপিং ব্যাগে কুঁকড়ে 'কমা' হয়ে শুয়েছিলাম। ঠান্ডা ভালোই। ভোর হয়ে গেছে। বাইরে হিমালয়ান ফিজান্টের একটানা ডাক শোনা যাচ্ছে। কাকেরাও কম যায় না। আস্তে আস্তে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শুনলাম-"কাম অন আউট গাইজ, ইওর মর্নিং টি ইজ হিয়ার।" জামাকাপড় জড়িয়ে টেন্টের চেন টেনে বেরোতেই এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেল। সবাই সবাইকে 'গুড মর্নিং' উইশ করে কিচেন টেন্টে লাইন লাগালাম চায়ের উদ্দেশ্যে।
ব্রেকফাস্টের পর সবাই রাউন্ড করে সার্কেল বানিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেক লিডারদের ব্রিফিং শুনতে লাগলাম। আজকের গন্তব্য 'আপার বালু কা ঘেরা'। সবুজ গালিচা বিছানো রঙিন ফুলের মাঝখান দিয়ে পথচলা শুরু। আজও প্রায় পাঁচ-ছ ঘন্টার হাঁটা। প্রথম ঘন্টায় সমান্তরাল ট্রেল বেয়ে সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে এগোতে থাকলাম সবাই। দলের সবাই যে যার আপন গতিতে চলেছে। মাঝে মাঝেই হঠাৎ খাড়াই বোল্ডারের চড়াই এসে হাজির হচ্ছে। আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। সূর্যদেব মাঝে সাঝে অল্প স্বল্প 'পিক-আ-বু' করেই কেটে পড়ছেন দিব্যি। নদীকে ডান হাতে রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি চড়াই ভাঙতে ভাঙতে। মাঝে মধ্যে দৃষ্টিসুখ বাড়িয়ে দিচ্ছে ডানদিকের অনামী পাহাড় বেয়ে নেমে আসা বিশাল বিশাল গ্লেসিয়ার আর তার সাথে লাইন দিয়ে এগিয়ে চলা ভেড়ার পাল। আলাপ হল তাদেরই একজন চঞ্চল শক্তসমর্থ দেহরক্ষীর সাথে। স্টিভ আর জেসিকার সঙ্গে তার দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। নরম বাদামি লোমশ চেহারার 'ব্রাউনি' আমাদের টিম মেম্বার হয়ে গেল।

ঘন্টা দুই একটানা হাঁটার পর এক ঢালু উৎরাই নামতেই অপূর্ব দৃশ্যে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সামনে এক খাড়াই পাথরের দেওয়াল। তার পাশ দিয়ে নেমে এসেছে অপূর্ব এক ঝরনা। ডানদিকেও খাড়া উঠে গেছে পাথরের দেওয়াল। তার ওপরে পুরো সবুজের চাদর আর সামনে নদীর এপারে এক বিশাল পাথরের টিলা একা দাঁড়িয়ে। এই নিঝুম বিশালত্বে বড়োই একা হতে মন চাইল। দাঁড়িয়ে পড়লাম স্থবির হয়ে। একে একে অনেকেই পেরিয়ে গেল পাশ দিয়ে। আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না। দাঁড়িয়েই রইলাম।
সৌম্যদার ডাকে হুঁশ ফিরল। একসাথে হাঁটতে শুরু করলাম। "আচ্ছা, হামটা পাস কেন? এরকম অদ্ভূত নাম কিন্তু শুনিনি।" সৌম্যদাকে জিজ্ঞেস করতে বলল ওরও সঠিক ভাবে কিছু জানা নেই। আমি যদি কিছু জানতে পারি তাহলে যেন জানাই। বাড়ি ফিরে ইন্টারনেটে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সামান্য একটু তথ্য আবিষ্কার করা গেল। মহাভারতীয় যুগে কৌরব অধিকারে থাকা ওইসব পার্বত্য প্রদেশে মহর্ষি হামটা তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেন এবং এক আশ্রম তথা গ্রামের স্থাপনা করেন যার নামকরণ তাঁর নামানুসারেই হয় হামটা গ্রাম। সেখান থেকেই চলতি পথে অনুসৃত হয়ে বর্তমান হামটা পাস নামকরণ। এই পাস কুলু ভ্যালির সাথে স্পিতি ভ্যালির যোগাযোগ স্থাপন করেছে, যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৪২৭০ মিটার (১৪০১০ ফিট)।
আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম। নীলাদ্রি এগিয়ে গেছে কখন খেয়াল করিনি। হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম বোল্ডারের রাজ্যে একা। পিছনে তাকিয়ে অনেক দূরে সুনীলের সঙ্গে কয়েকজনকে দেখতে পেলাম। সুনীল একদম বাচ্চা ছেলে, সতেরো কী আঠারো বছর হবে, আমাদের কো-গাইড ও। আজ ওর দায়িত্ব ছিল 'সুইপার'-এর। 'সুইপার' একটা টেকনিক্যাল টার্ম। এখানে টিমের ফর্মেশন নিয়ে একটু বলে রাখি। আমাদের ট্রেক লিডার দু'জন আগেই বলেছি, সৌম্যদা আর হৃষীকেশ। সঙ্গে টেকনিক্যাল গাইড কাম ম্যানেজার রাহুল আর কো-গাইড সুনীল। আমাদের টিম বেশ বড়ো হওয়ায় এই চারজন সামনে থেকে পিছনে চারটে পয়েন্টে সবার সাথে চলেছে। একেবারে শেষ জনের নাম 'সুইপার'। তার কাজ শেষ ট্রেকারকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা। আমাদের মধ্যে এই শেষ ব্যক্তিটি হলেন সাউথের তামিল-তেলেগু-মালায়লাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিখ্যাত নায়িকা নমিতা।
একটুখানি জল গলায় ঢেলে কয়েক ধাপ উপরে উঠতেই দেখি জুয়েল মাথা ঝুঁকিয়ে একটা পাথরের ওপর বসে। 'কী হয়েছে' জিজ্ঞেস করায় বলল-"ফিলিং ব্রেথলেস অ্যান্ড ডিজি, নিয়ারলি ব্ল্যাকড আউট"। বুঝতে পারছিলাম ভীষণ অক্সিজেন-এর অভাবে ভুগছে ও। বেশি করে জল খেতে বলে আর মিনিট পাঁচেক অন্তত বসে রওনা দিতে বলে আমি এগিয়ে গেলাম। গতকালের মতো আজও আকাশ মুখ ভার করে ছিল। একটা অপরূপ সফেন দুধ-সাদা ঝরনার পাশে অভিষেক-প্রিয়াঙ্কা, নভিন আর সুমিতের সঙ্গে নীলাদ্রিকে পেয়ে গেলাম। ছবি তুলে মন ভরছিল না।এদিকে মেঘের সঙ্গে কুয়াশা জোট বেঁধে সব আলো শুষে নেওয়ার চক্রান্ত করতে বসেছে। দেরি না করে পা চালাতে শুরু করলাম সবাই। কালকের জামাকাপড়ই শুকোয়নি। আজ আবার ভিজে গেলে কেলেঙ্কারির একশেষ হবে। আধঘন্টা মতো হাঁটার পর তিরতির করে বয়ে চলা এক ছোট্ট ঘুমপাড়ানি ঝরনা পাশে সঙ্গ নিল। দূরে এক অপূর্ব লেকের মতো এলাকার পাড়ে পাহাড়ের ঢালে আমাদের হলুদ তাঁবুর সারি দেখতে পেলাম। তবে সেখানে পৌঁছোতে গেলে পেরোতে হবে দুর্লঙ্ঘ উঁচু উঁচু বোল্ডারের জঙ্গল আর প্রবল বেগে ধেয়ে আসা নদী। নীলাদ্রির অভিজ্ঞতা এইসবে আমার চেয়ে বেশি। ওকে লিড করতে বলে আমি ওর ফুটস্টেপ ফলো করে এগোতে লাগলাম। লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে দুহাতে হাঁচোড়-পাঁচোড় করে ক্লাইম্ব করে রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে নদীর পাড়ে পৌঁছোতে আধঘন্টা লেগে গেল। রাহুল দাঁড়িয়ে ছিল। পাথরের ওপর পা ফেলে রাহুলের হাত ধরে পার হয়ে গেলাম। আজকের মতো হাঁটা শেষ। এসে পড়েছি দ্বিতীয় ক্যাম্প, রানি নালার পাড়ে, বালির রাজ্য "বালু-কা-ঘেরা"-য়।

প্রথমে ভেবেছিলাম এই দিনটায় তো বিশেষ কিছু ঘটেনি তেমন কী আর লিখব, কিন্তু পরে মনে হল ক্যাম্পসাইটটার অন্তত একটা বর্ণনা দেওয়া প্রয়োজন। ওখানে বসেই স্কেচবুকে ছবি আঁকতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু নিয়ে যাইনি তাই ছবি তুলে সাধ মেটালাম। তবে পরে বাড়ি ফিরে আর লোভ সামলানো যায়নি।

আমাদের ব্যাচই প্রথম ক্যাম্প করল এখানে। আগে এই ক্যাম্প করা হত বোল্ডার রাজ্যের আগে এক সমতলে, যার নাম লোয়ার বালু-কা-ঘেরা। জিপিএস এ ল্যাটিটিউড-লঙ্গিটিউড নোট করে নেওয়া হল। একেবারে নতুন ক্যাম্পসাইট, তাই ভালো করে পরিষ্কার করা হয়ে ওঠেনি। চারিদিকে সবুজ ঘাস আর ছোটো বুনোফুলের গাছের জঙ্গল। তাই পোকামাকড়ের উৎপাত যথেষ্টই। তবে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমস্ত কষ্ট ম্লান করে দেয়। সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া রানি নালা এবং তার পাশে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক হ্রদে গগনচুম্বী তুষারশুভ্র শৃঙ্গের প্রতিচ্ছবি মনকে এক পলকে অন্য পৃথিবীতে নিয়ে চলে যায়। আরেকদিকে ইন্দ্রাসন শৃঙ্গ মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। দূরে বোল্ডার আর রাশি রাশি তুষারের মাঝে উঁকি দিচ্ছে হামটা পাসের পথ।

লাঞ্চের পর কুয়াশার মতো গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টির পরোয়া না করে স্টিভ, জেসিকা আর জুয়েল হাঁটা লাগাল সামনের গ্লেসিয়ার এর উদ্দেশ্যে। আমাকেও ডাক দিল বরফ ছোঁড়ার খেলায় যোগ দেওয়ার জন্য। আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না, ক্লান্ত লাগছিল। ব্রাঊনির উৎসাহের অন্ত নেই। সে ঠিক পিছু নিল।

নীলাদ্রি আর আমি ডাক্তারবাবুদের টেন্টে ঢুকে পড়লাম আড্ডা দিতে (বাঙালির ল্যাদ, যাবে কোথায়?)। সৌম্যদা আর হৃষিও যোগ দিল। সবার পুরোনো ট্রেকের গল্প করতে করতে সময় কেটে গেল দেখতে দেখতে। ছটায় স্যুপ আর সাতটায় ডিনার খেয়ে টেন্টে ঢুকে পড়লাম। কাল 'পাস ডে'। সক্কাল সক্কাল বেরোতে হবে। ঠান্ডাটা জাঁকিয়ে ধরছিল। রুটিনমাফিক অক্সিমিটার নিয়ে সৌম্যদা হাজির হল একটু পরেই। রিডিং দেখে ঘাবড়ে গেলাম। মাত্র ৭৪, অর্থাৎ ডেঞ্জার জোনে ঢুকে পড়েছি। সৌম্যদা চিন্তিত মুখে বলে গেল বেশি করে জল খাও আর ডায়ামক্স এর ডোজটা ভুলো না। কাল সকালে আবার দেখে ঠিক করব কী করা যায়। জুয়েলের কথাটা আগেই ওকে বলেছিলাম। ওকেও ওষুধ দিয়েছে জানিয়ে টেন্টের জিপার টেনে সৌম্যদা বিদায় নিল। নিলু আর আমি নিজেদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে ওষুধ খেয়ে স্লিপিং ব্যাগে বডি চালান করে দিলাম। তাহলে কি পাস পেরোনো হবে না আমার?

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

~ ~ হামটা পাস ট্রেকরুট ম্যাপ ~ হামটা পাস ট্রেকের আরও ছবি ~

জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার টেকনিকাল অ্যাসিস্টেন্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন পাহাড়ে না গেলেই ডিপ্রেশনে ভোগেন। ট্রেকে বেরোলেই ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। কিন্তু ফিরে এসে লিখতে বসলেই আবার ল্যাদ খান। তবে এর পরেও কষ্টেসৃষ্টে যেটুকু লেখেন তা স্রেফ '' আমাদের ছুটি''-র জন্যই। বাড়িতে চমৎকার রুটি বানান। মাঝেমধ্যে রান্না করতেও ভালোবাসেন।

 

SocialTwist Tell-a-Friend

To view this site correctly, please click here to download the Bangla Font and copy it to your c:\windows\Fonts directory.

For any queries/complaints, please contact admin@amaderchhuti.com
Best viewed in FF or IE at a resolution of 1024x768 or higher