বেঙ্গালুরু (Bengaluru)- পশ্চিমঘাট  পর্বতমালার বুকে কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু। ১৬ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের  অধিপতি কেম্পেগৌড়ার হাতে পত্তন হয় বান্দা-কালোরু বা সেদ্ধ-বিনের শহর। কালে কালে  বান্দাকালোরু হয় বেঙ্গালুরু। পরবর্তীসময়ে হায়দার আলি-টিপু সুলতানের হাত ঘুরে  ব্রিটিশদের হাতে যায় এই শহর। ব্রিটিশদের দেওয়া ব্যাঙ্গালোর (Bangalore) আবার এখন পূর্বনামে ফিরেছে। ‘গার্ডেন সিটি’ নামে খ্যাত এই শহর এখন  তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্যও বিখ্যাত। শহরের সাজসজ্জা, জীবনধারার মানও তাই বেশ  উন্নত। 
        শহরের প্রধান আকর্ষণ বিশাল কুব্বন পার্ককে ঘিরে বিধানসৌধ, হাইকোর্ট, সেন্ট্রাল  লাইব্রেরি, অ্যাকোরিয়াম, সরকারি মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারি এবং বিশ্বেশ্বরাইয়া শিল্প  ও কারিগরি মিউজিয়াম। বিলেতের উইন্ডসর প্যালেসের অনুকরণে তৈরি ব্যাঙ্গালোর প্রাসাদটিও  দর্শনীয়। 
        শহরের দক্ষিণে দ্রাবিড়শৈলীতে তৈরি নন্দীর মন্দির বুল টেম্পল (Bull  Temple)। গ্র্যানাইট পাথর কুঁদে তৈরি নন্দী মূর্তিটি। শহরের দক্ষিণভাগে আরেক দর্শনীয়  স্থান লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন। সিটি মার্কেটের দক্ষিণে টিপু সুলতানের দুর্গ ও  প্রাসাদ। বেঙ্গালুরু থেকে মহীশূরের পথে, প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে নন্দী হিলসের  ওপরে টিপু সুলতানের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, নিচে চালুক্য রাজাদের আমলের নন্দীমন্দির। 
        বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বানারঘাট্টা জাতীয় উদ্যান (Bannerghatta National Park)। রয়েছে চিড়িয়াখানা এবং বাঘ ও  সিংহ সাফারি। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা। 
  যাওয়াঃ- বিমানপথে দেশের প্রায় সব বড়ো শহরের সঙ্গেই যুক্ত। শহর ঘিরে তিনটি রেলস্টেশন-  ব্যাঙ্গালোর সিটি, ক্যান্টনমেন্ট এবং যশোবন্তপুর। বেঙ্গালুরু থেকে সড়ক পথে প্রায়  সব দক্ষিণী শহরেরই যোগাযোগ আছে। 
  থাকাঃ- রেলস্টেশন ও প্রধান বাসস্ট্যান্ড ঘিরে সাধারণ ও মাঝারি মানের হোটেল বেশি।  দামি হোটেলগুলি অধিকাংশই মহাত্মা গান্ধী রোডে। সন্ধেবেলা এম জি রোড চত্ত্বরের আলো  ঝলমলে দোকান, শপিং মল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট মিলিয়ে জমজমাট এলাকায় ঘুরে বেড়াতে বেশ  ভাল লাগে। বেঙ্গালুরুর এস টি ডি কোডঃ ০৮০।
  মহীশূর (Mysore)- জনশ্রুতি, এই অঞ্চলেই ছিল মহিষাসুরের রাজত্ব। এখানেই নাকি তাকে  বধ করেছিলেন দেবী চামুণ্ডেশ্বরী। তাই নাম মহীশূর। তবে ইতিহাসে খুঁজলে মহীশূরের  প্রথমদিককার রাজা বলতে গঙ্গা রাজবংশের (৩২৫-৯৯৯ খ্রীস্টাব্দ) কথাই পাওয়া যায়। যদিও  মহীশূরের একটা অংশেই এঁরা রাজত্ব করতেন। এরপর বারবারই হাতবদল হয়েছে। তবে মহীশূরের রাজবংশ  বলতে মূলত ওয়াহিদা রাজাদের (১৩৯৯-১৭৬১ খ্রীঃ) বোঝায়। এরপর হায়দর আলি – টিপু সুলতানের হাত ঘুরে মহীশূর  ইংরেজদের করায়ত্ত হয়। মহীশূরের প্রধান দ্রষ্টব্য রাজবাড়ি, বৃন্দাবন গার্ডেন ও  চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির। মূল প্রাসাদটি পুড়ে যাওয়ায় নতুন প্রাসাদটি ১৯১২ সালে তৈরি  হয়। রঙিন কাচ ও বাহারি দেওয়ালে সজ্জিত প্রাসাদটির স্থাপত্য দর্শনীয়। দরবারমহল,  কল্যাণমন্ডপ, চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে সময় লাগে। রবিবার, অন্যান্য ছুটির দিন  এবং দশেরা উৎসবে আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে প্রাসাদ। কারপার্কে মহিষাসুরের বিশাল মূর্তি ও  মিউজিয়াম। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে লোকশিল্প মিউজিয়াম (রবিবার বন্ধ),  ইন্দিরা গান্ধি রাষ্ট্রীয় মানব সংগ্রহালয় (রবিবার বন্ধ), গভর্নমেন্ট হাউজ,  ক্লকটাওয়ার, সেন্ট ফিলোমেনাস চার্চ, জগমোহন প্যালেস আর্ট গ্যালারি,  চিড়িয়াখানা(মঙ্গলবার বন্ধ) ইত্যাদি। 
        শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে চামুণ্ডি হিল। পাহাড়ের মাথায় দেবী চামুণ্ডেশ্বরীর  মন্দির। ইচ্ছে হলে ১,০০০ সিঁড়ি ভেঙে ওঠা যায় অথবা বাস কিংবা গাড়িতে। পাহাড়ে  ওঠা-নামার পথে পড়বে বিশাল পাথর কেটে খোদাই করা প্রায় ৫ মিটার উঁচু নন্দীমূর্তি। 
        শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণরাজসাগর বাঁধের পাড়ে বৃন্দাবন গার্ডেন (Brindavan Gardens)। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা অবধি খোলা থাকে এই বাগান। তবে বিকেলের দিকে যাওয়াই  ভালো। সন্ধেবেলায় একঘন্টা (রবিবার দুঘন্টা) বাগানজুড়ে চলে রঙিন ফোয়ারার নাচ। 
        ১৬ কিলোমিটার দূরে বিজয়নগর রাজাদের গড়া শ্রীরঙ্গপত্তনম দুর্গ (Seringapatam  Fort)। তবে এই দুর্গের সঙ্গে টিপু  সুলতানের নামও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে এখানেই প্রাণ হারান টিপু।  দুর্গের আশপাশে রয়েছে হায়দর আলির সমাধি, টিপু সুলতানের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, শ্রীরঙ্গনাথস্বামীর  মন্দির, দৌলতাবাদ, জুম্মা মসজিদ। 
        মহীশূর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ও শ্রীরঙ্গপত্তনম থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কাবেরী  নদীর বুকে দ্বীপাকার রঙ্গনাথিট্টু অভয়ারণ্য ও পাখিরালয় (Ranganathittu Bird Sanctuary)। 
        মহীশূর থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে ও শ্রীরঙ্গপত্তনম থেকে ২৫  কিলোমিটার দূরে সোমনাথপুরে রয়েছে হোয়সালা  রাজবংশের আমলে ১২ শতকের মাঝামাঝিতে তৈরি অনুপম  ভাস্কর্যশৈলীর চেন্নাকেশব মন্দির। 
        শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে শিবসমুদ্র (Sivsamudra Water  Falls) বড়াচুক্কি এবং গগনচুক্কি জলপ্রপাত। সবুজ  বনানীর মধ্য দিয়ে তীব্রগতিতে নেমে আসছে কাবেরী নদীর ধারা। প্রায় ৫ মিটার উঁচু থেকে  ঝাঁপিয়ে পড়ছে গর্জের কোলে। 
  যাওয়াঃ- নিকটতম বিমানবন্দর বেঙ্গালুরু প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে  রয়েছে নিয়মিত বাস ও ট্রেন যোগাযোগ। ট্রেন আসছে চেন্নাই ও অন্যান্য দক্ষিণী শহর  থেকেও। বাস যোগাযোগ রয়েছে উটি, বন্দিপুর, এর্নাকুলাম, হাসান ইত্যাদি জায়গার সঙ্গে। 
  থাকাঃ- বিলাসবহুল থেকে সাধারণ মানের সবরকম হোটেলই আছে। লক্ষ্মীবাই রোডে কর্ণাটক  পর্যটনের দুটি হোটেল রয়েছে - মৌর্য হোয়সলা এবং মৌর্য যাত্রীনিবাস। মহীশূরের এস টি  ডি কোডঃ ০৮২১। 
  কেনাকাটাঃ- মহীশূরের সিল্ক বিখ্যাত। তাছাড়া চন্দনকাঠ ও চন্দনসুবাসের নানা কসমেটিক্স,  গিফট আইটেম পাওয়া যায়। 
  বন্দিপুর ন্যাশনাল পার্ক (Bandipur National Park)- মহীশূর থেকে  উটিগামী রাস্তা বন্দিপুর জাতীয় উদ্যানের মধ্যে দিয়ে গেছে। একসময় এই অরণ্যই ছিল  ওয়াহিদা রাজাদের মৃগয়াভূমি।
        জঙ্গলে ঢোকার মুখেই বনবিভাগের অফিস, নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, বনবাংলো  ইত্যাদি। এখান থেকে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গল দেখাতে। ব্যাঘ্রপ্রকল্পের আওতাধীন  বন্দিপুরে বাঘের দেখা পাওয়া মুশকিল হলেও শম্বর, গাউর, চিতল, হাতি, শ্লথ বিয়ার ও  বন্য কুকুরের দেখা পাওয়া যাতে পারে। অরণ্যে নানা প্রজাতির পাখিরও দেখা মেলে। 
  যাওয়াঃ- মহীশূর এবং উটির সংযোগকারী রাস্তার মাঝামাঝিতে জঙ্গলে ঢোকার পথ। দুদিক থেকেই  প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অভয়ারণ্য। 
  থাকাঃ-অরণ্যের গভীরে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের কটেজ। বাইরে প্রাইভেট লজগুলি ছড়িয়ে  ছিটিয়ে রয়েছে।
  হাম্পি (Hampi) - তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে ছড়িয়ে আছে  ১৪ থেকে ১৬ শতক জুড়ে রাজত্ব করা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। ইতিউতি মাথা তুলে  দাঁড়িয়ে আছে ছোটবড় পাহাড়ি টিলা। ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ স্বীকৃতিও পেয়েছে একদা বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পি।
        হাম্পি বাজারের গায়ে এখানকার প্রধান আকর্ষণ  বিরূপাক্ষ মন্দির। দেবতা মহাদেব ও পম্পাদেবী। নয়তলা গোপুরমটির দূর থেকেই চোখে পড়ে।  বাসস্ট্যান্ডের গায়ে মাতঙ্গ পর্বত। টিলার শিরে মাতঙ্গেশ্বর শিবের মন্দির। কাছে কমলাপুরে  হাম্পির প্রত্নতত্ত্ব মিউজিয়াম। দক্ষিণী স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন রথাকার বিঠালা  মন্দির। মন্দিরের দেয়ালজুড়ে রামায়ণ ও অন্যান্য নানা অপরূপ খোদাই চিত্র। মন্দিরচত্ত্বর  পেরিয়ে প্রাসাদচত্ত্বর। প্রাসাদচত্ত্বরে রয়েছে হাজার রামস্বামী মন্দির। কাছেই কুইনস  বাথ বা রানিদের স্নানঘর। অন্দরের স্থাপত্য চমকপ্রদ। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে  রয়েছে জেনানামহল, মহানবমী ডিব্বা, লোটাসমহল, হাতিশালা ইত্যাদি। নদী পার হয়ে ঘুরে  আসা আনেগোন্ডা-এখানেও বেশকিছু মন্দির আছে।
  যাওয়াঃ- হাম্পি থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে হসপেট হয়ে আসাই  সুবিধাজনক। বেঙ্গালুরু থেকে সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার। তাই বাসে না গিয়ে বেঙ্গালুরু  থেকে ট্রেনে হসপেট হয়ে যাওয়াই সুবিধাজনক। হসপেট থেকে বাস ও অটোরিকশা যাচ্ছে হাম্পি  ।
  থাকাঃ- হাম্পির কাছেই কমলাপুর। এখানে আছে কর্ণাটক পর্যটনের  মৌর্য ভুবনেশ্বরী। হাম্পির এস টি ডি কোডঃ- ০৮৩৯৪।
  || ভ্রমণকাহিনি - হাম্পি – পাথর আর গ্রামের গল্প || 
  বেলুড়-হ্যালেবিদ (Belur-Halebid) - দ্বাদশ শতাব্দীতে হোয়সালা রাজারা ছিলেন প্রবল পরাক্রমশালী যোদ্ধা। বেলুড় ও  হ্যালেবিদ ছিল হোয়সালা রাজাদের  ক্ষমতাসম্পন্ন রাজধানী। যুদ্ধ জয়ের স্মৃতিকে অক্ষয় করে রাখার প্রচেষ্টা হয়েছে বেলুড়  ও হ্যালেবিদ মন্দির গাত্রে। 
        হাসান জেলার ছোট্ট জনপদ বেলুড়। অতীতে নাম ছিল ভেলাপুরী। হোয়সালা রাজাদের তৈরি মন্দিরগুলিই এখানকার আকর্ষণ। প্রধান দ্রষ্টব্য চেন্নাকেশব মন্দির  বাসষ্ট্যান্ডের কাছেই। চেন্নাকেশব হলেন শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণু। ১১১৬ সালে হোয়সালা রাজ বিষ্ণুবর্ধন মন্দিরটি নির্মাণ করান। এই মন্দির বেদীর  ন্যায় আকারযুক্ত ও তারাকাকৃতি। প্রত্যেকটি তল সুষম। ভাস্কর্য খোদিত গোপুরম দিয়ে মন্দিরে ঢুকতে  হবে। প্রধান প্রবেশদ্বারে পাখা মেলে করজোড়ে দাঁড়িয়ে শ্রীবিষ্ণুর বাহন  গরুড় পাখির মসৃণ কালো  পাথরমূর্তি। বিশাল প্রাঙ্গনের মাঝখানে মূল মন্দির আর তার  পাশে ছড়িয়ে আছে অন্যান্য মন্দির, এককোণে দোদুল্যমান  স্বর্ণঘটক ও মন্দির রথ। গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি। দু’পাশে দুই স্ত্রী – ভূদেবী ও  লক্ষ্মীদেবী। দক্ষিণদ্বারে স্তম্ভের মাথায় ও  কার্নিসের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ৬৫০টি যুদ্ধরত হস্তী খোদিত আছে। প্রত্যেকটি অন্যটির থেকে আলাদা। প্রাচীরে খোদিত আলম্বের ভাস্কর্য অপরূপ সুন্দর - বিষাদগ্রস্ত, হাস্যময়, ক্রীড়ারত, প্রেমাসক্ত, নৃত্যরত লীলাময়ী রমনীরা। দেবতাদের অলৌকিক  ক্রিয়াকার্য, দানবদের কার্যাবলীও খোদিত আছে ভাস্কর্যে। মন্দিরের ভিতরে পাথরের গোলস্তম্ভগুলি  মসৃণতার দৌলতে জ্বলজ্বল করে। অলংকারগুলি ফাঁপা ও মূর্তি স্পর্শ করলে সেগুলি নড়ে।  প্রতিটি কাহিনী, অলংকার, নৃত্যের মুদ্রা এমনকি কেশ বিন্যাস পর্যন্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম  ভাবে খোদিত। মন্দিরের সামনে গোলাকৃতি চত্বরে চেন্নাকেশবের সন্মানার্থে সম্রাট বিষ্ণুবর্ধনের রানি দেবী সান্তালার নৃত্যরত ভঙ্গিমার মূর্তি। মন্দিরের মূল গর্ভগৃহের ছাদে দিকে তাকালে অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত আলম্ব চারটি নর্তকীমূর্তি চোখে পড়ে। প্রতিটি মূর্তিই যেন সান্তালা দেবীর  কামময় সৌন্দর্যরূপ। প্রথম নর্তকীর আন্দোলিত বাহুদুটি ছন্দের তালে চিত্রবৎ। দ্বিতীয় নর্তকীর আঙুলের ভঙ্গিমা যেন ফোটা ফুলের মত। অপর মূর্তিটি একটি পোষা টিয়া পাখির সঙ্গে  আলাপরত যার পুচ্ছ ময়ূরের ন্যায়। চতুর্থ মূর্তির ভাস্কর্য দেখলে মনে হয় তার ভেজা  চুলে জলের ফোঁটাগুলি হঠাৎই যেন পাথর  হয়ে আটকে গেছে। যে কোনও মুহূর্তে তা ঝরে পড়বে মাটিতে। মন্দিরের মধ্যে রয়েছে পবিত্র  জলাশয় বাসুদেব সরোবর। এছাড়া বীরনারায়ণ, লক্ষ্মী-নারায়ণ, দুর্গা, গণেশ, সরস্বতী  প্রভৃতি মন্দির আছে বেলুড়ে। 
        বেলুড় থেকে ১৬ কিমি দূরে হ্যালেবিদে দ্বারসমুদ্রম সরোবরের তীরে হোয়েসলেশ্বর মন্দির। এই মন্দির আয়তনে বেলুড়ের মন্দিরের প্রায় দ্বিগুণ। তবে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের দিক দিয়ে  বেলুড়ের মন্দিরের সঙ্গে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এর গঠনও তারকাকৃতি। মন্দিরের উপাস্য দেবতা শিব। বাইরে শিবের বাহন বিশালাকার নন্দীমূর্তি। দেওয়ালে শিশুকৃষ্ণের  আনন্দময় মুখ, ক্রুদ্ধ রূপ, শিব ও পার্বতীর  আলিঙ্গন দৃশ্য, রাবণের কৈলাস পর্বত তুলে ধরার  দৃশ্য এবং নটরাজের প্রলয় নাচ মুগ্ধতার সৃষ্টি করে। মানবীয় ও পৌরাণিক দেবদেবীগণের মূর্তিগুলি এখানে আকৃতিতে অনেক বড় এবং অসাধারণ  কারুকার্যময়। মূর্তিগুলি সবই উজ্জ্বল  কালো পাথরের তৈরি। হ্যালেবিদের প্রাঙ্গণে দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত ভাস্কর্য  ও তৎকালীন মুদ্রার একটি মূল্যবান  সংগ্রহশালা রয়েছে। মন্দিরের কাছেই পরশুনাথ জৈন মন্দির ও কেদারেশ্বর  শিব মন্দির। 
  যাওয়াঃ- বেঙ্গালুরু থেকে হাসানের দূরত্ব ১৮২ কিমি। অনেক বাস আছে ব্যাঙ্গালোর হাসানের মধ্যে।  হাসানে রাত কাটানোর মতো দু-চারটে সাধারণ মানের হোটেল ও লজ আছে। দক্ষিণী খাবার ছাড়া  অন্য কোনও খাবার পাওয়া মুশকিল। হাসানে একটা রাত কাটিয়ে সকালে বেলুড়। হাসান বেলুড়ের  দূরত্ব ৪০ কিমি। বেলুড় থেকে ১৬ কিমি দূরে হ্যালেবিদের  মন্দিরও একদিনেই দেখে নেওয়া যায়। রাতে হাসান ফিরে এসে রাতের বাস ধরে মহীশূরের পথে  পাড়ি দেওয়া যায়। 
  থাকাঃ- ভালো করে দেখতে হলে বেলুড় বা হ্যালেবিদে থাকতে হবে। কর্ণাটক  পর্যটনের বেলুড়ে মৌর্য ভেলাপুরি ও হ্যালেবিদে মৌর্য সান্থালা। দু’জায়গাতেই পি ডব্লু ডি-র ট্রাভেলার্স বাংলো আছে। বেলুড়ে কয়েকটি হোটেলও আছে। বেলুড় ও হ্যালেবিদের এস টি ডি কোডঃ- ০৮১৭৭। 
  শ্রবণবেলগোলা (Shravanabelagola)-জৈনতীর্থ শ্রবণবেলগোলার খ্যাতি ইন্দ্রগিরি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ৫৭ফুট  উঁচু বিশালকায় গোমতেশ্বর মূর্তির জন্য। ৯৮১ খ্রীষ্টাব্দে গঙ্গা রাজাদের  আমলে বিশাল এক পাথর খোদাই করে মূর্তিটি নির্মিত হয়। ৬১৪টি পাথরের সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছতে হয় মূর্তির পায়ের কাছে। 
  যাওয়াঃ-বেঙ্গালুরু থেকে শ্রবণবেলগোলার দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার, মহীশূর থেকে ১০০ কিলোমিটার। হাসান থেকে ৫২ কিলোমিটার। 
  থাকাঃ-মন্দিরের ধর্মশালা বা বেসরকারি  হোটেলে থাকতে হবে। 
  বিজাপুর (Bijapur)- আদিল শাহী রাজাদের একসময়ের রাজধানী  বিজাপুর এখন উত্তর কর্ণাটকের অন্যতম একটি ব্যস্ত শহর। বিজাপুরের অন্যতম দর্শনীয়  স্থান গোলগম্বুজ। মহঃ আদিল শাহ নিজের স্মৃতিসৌধ হিসেবে নির্মাণ করেন। সামনেই  মিউজিয়াম। শুক্রবার বন্ধ থাকে। সিটি বাসস্ট্যান্ডের পিছনে বিজাপুর দুর্গ। তৈরি  হয়েছিল ১৫৬৫তে। দুর্গের অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাসাদ অংশে বসেছে সরকারি অফিস। এছাড়া  অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে ইব্রাহিম রোজা মসজিদ, ১২টি সুন্দর খিলান সমেত  অসম্পূর্ণ স্মৃতিসৌধ বরা কামান, জামি মসজিদ, জোড়া মসজিদ, আসার-ই-শরীফ,  মালিক-ই-ময়দান ইত্যাদি।
  যাওয়াঃ- নিকটতম বিমানবন্দর ২০০ কিলোমিটার দূরে বেলগাঁও বা বেলগাম (Belgaon)। সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে  বেঙ্গালুরু (৫৭০ কিলোমিটার), সোলাপুর (১০১ কিলোমিটার), গুলবর্গা (১২০ কিলোমিটার), হায়দ্রাবাদ  (৪২০ কিলোমিটার) ও মুম্বইয়ের (৫০০ কিলোমিটার) সঙ্গে। তাছাড়া রেলযোগাযোগ রয়েছে  ব্যাঙ্গালোর, মুম্বই ও হায়দ্রাবাদের সঙ্গে। তবে বিজাপুরের খ্যাতি বাদামি, আইহোল ও  পাট্টাডাকাল সার্কিটের প্রবেশদ্বার হিসেবেও। হাম্পি থেকে বিজাপুরের দূরত্ব ১৮৬  কিলোমিটার।
  থাকাঃ- কর্ণাটক ট্যুরিজমের  হোটেল মৌর্য আদিল শাহী ও  হোটেল মৌর্য অ্যানেক্স। পি ডব্লু ডি বাংলোও  আছে। এছাড়া বেসরকারি হোটেল। বিজাপুরের এস টি ডি কোডঃ- ০৮৩৫২।
  বাদামি-আইহোল-পাট্টাডাকাল (Badami – Ihole - Pattadakalu) - রামায়ণের  দুই কুখ্যাত রাক্ষস ইল্বল-বাতাপির বাস ছিল নাকি এখানেই। সম্ভবত বাতাপি থেকেই নাম  বাদামি। দুটি পাহাড়ের মাঝে গিরিখাত জুড়ে বাদামির নানা আকর্ষণগুলি। চালুক্য, পল্লব,  কালচুরীয়, যাদব, বিজয়নগর, আদিল শাহী, মারাঠা ও শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ -একের পর এক হাতবদল হয়েছে শাসকের। তারই  ছাপ রয়ে গেছে ৬ থেকে ৮ দশকের মধ্যে তৈরি পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন গুহা মন্দিরগুলিতে। মূলত  পল্লব রাজাদের সময় গুহামন্দিরগুলি তৈরি হয়েছিল। মন্দির ছাড়াও পুরোনো দুর্গের নানা  ধ্বংসাবশেষ ও শিলালিপি ছড়িয়ে আছে এখানে।
        ২৯ কিলোমিটার দূরে পাট্টাডাকাল। মালপ্রভা নদীর তীরে  অবস্থিত পাট্টাডাকালের খ্যাতি ৮ম শতাব্দীর মন্দিরের জন্য। চালুক্য রাজবংশের একদা মন্দিরময়  রাজধানী বর্তমানে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকাভুক্ত। উল্লেখযোগ্য মন্দির  পাপানাথ, বিরূপাক্ষ, মল্লিকার্জুন প্রভৃতি। ৭৪৫ সালে চালুক্যরাজ দ্বিতীয়  বিক্রমাদিত্যর আমলে তৈরি হয় বিরূপাক্ষ মন্দিরটি। মল্লিকার্জুন মন্দিরটিও এইসময়েই  নির্মিত হয়। সংগমেশ্বর মন্দিরটি আরও পুরোনো।
        পাট্টাডাকাল থেকে ১৭ কিলোমিটার, বাদামি থেকে ৪৬  কিলোমিটার দূরে চালুক্য রাজাদের প্রথম রাজধানী আইহোল। এখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য  মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। উল্লেখযোগ্য কুন্তি টেম্পল কমপ্লেক্স, উমা-মহেশ্বর মন্দির, জৈন  মন্দির, লাডখান মন্দির, দুর্গগুডি ইত্যাদি।
  যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন বিজাপুর, হুবলি ও গড্যা। বাদামি থেকে  দূরত্ব যথাক্রমে ১৫০ কিলোমিটার, ১১০ কিলোমিটার ও ৭০ কিলোমিটার। বেঙ্গালুরু থেকে বাদামির  সড়কদূরত্ব ৪৮০ কিলোমিটার। গোয়ার ডাবোলিম বিমানবন্দর ২৯০ কিলোমিটার দূরে।
  থাকাঃ- বাদামিতে কর্ণাটক পর্যটনের হোটেল ময়ুর চালুক্য। আইহোলে পর্যটনের আইহোল  ট্যুরিস্ট হোম। এছাড়া বেসরকারি হোটেল। বাদামির এস টি ডি কোডঃ- ০৮৩৫৭। আইহোলের এস  টি ডি কোডঃ- ০৮৩৫১।
  ম্যাঙ্গালোর (Mangalore)- শহর ছাড়িয়ে একটু গেলেই সোনালী  বেলাভূমি ও নীল আরবসাগর। দর্শনীয় কাদ্রি মঞ্জুনাথ মন্দির, সেন্ট আলয়সিয়াস কলেজের  চ্যাপেল। পুরোনো বন্দরে রয়েছে পাথরের তৈরি সুদৃশ্য বুরুজ সুলতানস ব্যাটারি। প্রায়  ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে উল্লাল বিচ। শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলাদেবীর  মন্দির।
        শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে কারকালায় রয়েছে  প্রায় ১৫ মিটার উঁচু গোমতেশ্বর মূর্তি। কফি ও কাজুর জন্যও বিখ্যাত কারকালা।
        ম্যাঙ্গালোর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার ও কারকালা  থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিখ্যাত বৈষ্ণবতীর্থ উদুপি (Udupi)। মাধবাচার্যের জন্ম হয় উদুপিতে। উদুপির  প্রধান আকর্ষণ মাধবাচার্য প্রতিষ্ঠিত শ্রীকৃষ্ণমন্দির। আর আছে, মহাভারতের কাহিনি  খোদাই করে সাজানো সোনায় মোড়া কাঠের রথ। 
        শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে তুঙ্গ ও ভদ্রা  নদীর সংগমস্থলে শ্রীঙ্গেরী (Sringeri)। অদ্বৈতবাদী জগদগুরু  শ্রীশংকরাচার্য এখানেই তাঁর প্রথম মঠটি স্থাপন করেন। প্রধান আরাধ্য দেবী সারদা। বিদ্যাশংকর  মন্দিরের ১২টি রাশিচক্র স্তম্ভও দর্শনীয়।
  যাওয়াঃ- ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরটি শহর থেকে প্রায় সাড়ে তিন  কিলোমিটার দূরে। বাস আসছে কর্ণাটকের প্রায় সব বড়ো শহর থেকেই। কেরালা, মুম্বই ও  পানাজি থেকেও। তবে কোঙ্কণ রেলপথ ধরে গেলে আরও ভালো লাগবে।
  থাকাঃ- কর্ণাটক ট্যুরিজমের  হোটেল মৌর্য নেত্রবতী। নানা মান ও দামের প্রচুর  বেসরকারি হোটেলও আছে। ম্যাঙ্গালোরের এস টি ডি কোডঃ- ০৮২৮। 
  যোগ ফলস (Jog Falls)- পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সবুজ  বনানীর বুকে সারাবতী নদীর জলপ্রপাতটি ভারতে উচ্চতম(২৯২ মিটার)। চারটি ধারায়-রাজা,  রানি, রকেট ও রোদার-বিভক্ত হয়ে নামছে। সারাবতী বাঁধ ও জলাধার হওয়ার পর জলধারার বেগ  কমে গেলেও ভরা বর্ষায় যৌবনবতী। তৈরি হয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। কাছেই গুদাভি বার্ড  স্যাংচুয়ারি। 
  যাওয়াঃ- নিকটতম রেলস্টেশন ১৬ কিলোমিটার দূরে তালগুপ্পা। বেঙ্গালুরু বা  মহীশূর থেকে ট্রেনে বিরুর হয়ে শিমোগায় পৌঁছে, সেখান থেকে ট্রেনে তালগুপ্পা যাওয়া যায়। বাসও আসছে কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ভদ্রাবতী-শিমোগা হয়ে অথবা  ম্যাঙ্গালোর থেকে শ্রীঙ্গেরী হয়েও আসা যায় যোগ ফলস। 
  থাকাঃ-কর্ণাটক ট্যুরিজমের সারাবতী  ট্যুরিস্ট হোম, হোটেল মৌর্য গেরুসোপ্পা। পি ডব্লু ডি বাংলো আর ইয়ুথ হোস্টেলও আছে।  এছাড়া বেসরকারি হোটেল। 
  কারওয়ার (Karwar) - আরবসাগরের বুকে নারকেল, ঝাউয়ে ছাওয়া সোনালি সাগরবেলা। পশ্চাৎপটে পশ্চিমঘাট  পর্ব্তমালা। কোঙ্কণ উপকূলে কালীনদী এসে মিশেছে আরবসাগরে। এখানেই নির্জনে প্রকৃতির  একান্ত সান্নিধ্যে তরুণ রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তাঁর প্রথম নাটক ‘প্রকৃতির পরিশোধ’। তবে এখন এটি বেশ জমজমাট বন্দর।
        কালীনদীর সেতু পেরিয়ে ১২ কিমি দূরে শিবাজির দুর্গের  ভগ্নস্তুপ নিয়ে সদাশিবগড়। ৩ কিমি দূরে কালীনদীর মোহনায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য। তবে  কারওয়ারের সেরা আকর্ষণ ৪ কিমি দূরে ছোট্ট দ্বীপ দেববাগ। কারওয়ার পোর্ট থেকে স্পিডবোটে  কালীনদীর বুকে ভেসে পড়া। কিছুটা এগোতেই চোখে ভেসে ওঠে দেববাগের সবুজ সৈকত। দেববাগ  দ্বীপের নিরালা প্রান্তরে কর্ণাটক পর্যটনের জাঙ্গল লজেস অ্যান্ড রিসর্টের ব্যবস্থাপনায়  গড়ে উঠেছে থাকা-খাওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা। রয়েছে নানা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের  ব্যাবস্থাও। সাগরজলে কায়াকিং, রোয়িং বা ওয়াটার স্কুটার কিংবা ব্যানানা বোট রাইড  করা যায়। এখান থেকেই আলাদা আলাদা করে টিল মাটি বিচ, বোলদি হিলস, ডলফিন ট্রিপ আর  লাইটহাউস দ্বীপ ঘুরে নেওয়া যায়।
        কারওয়ার থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গোকর্ণ (Gokarna)। দ্রষ্টব্য অপূর্ব সমুদ্রসৈকত  আর প্রাচীন শিবমন্দির -মহাবলদেব। থাকার ব্যবস্থা আছে, তবে সীমিত।
  যাওয়াঃ- কাছের রেলস্টেশন কারওয়ার। মুম্বই, ম্যাঙ্গালোর,  গোয়া থেকে কোঙ্কণ রেলপথে পৌঁছোনো যায়কারওয়ার। 
  থাকাঃ- কর্ণাটক পর্যটনের দেববাগ বিচ রিসর্টই ভালো।  কারওয়ার শহরটা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে দেববাগ বিচের কাছেই মাজালি বিচ ভিলেজ।  এখানে নন- এ সি, এ সি কটেজ যেমন আছে তেমনি উড হাউস, ট্রি হাউস ইত্যাদিও রয়েছে।
  নেত্রানি/ পিজিয়ন আইল্যান্ড(Netrani/Pigeon  Island) - আরব সাগরের কোলে একটা ছোট্ট দ্বীপ -কর্ণাটক উপকূলের  শেষ প্রান্তে। মন্দির শহর মুরুদেশ্বর থেকে মোটামুটি ১০ নটিকাল মাইলস (১৯ কিমি)  দূরে নেত্রানি। অজস্র পায়রা ছাড়া এই দ্বীপের আরেক  বাসিন্দা হল বুনো ছাগল। মুরুদেশ্বর পৌঁছাতে হলে সবথেকে ভালো হয় উদিপি বা হুবলি  থেকে বাস / ট্যাক্সি নেওয়া। নেত্রানিতে থাকার কোন জায়গা নেই,  কিন্তু মুরুদেশ্বরে প্রচুর হোটেল আছে -সব থেকে ভালো হল আর. এন. শেঠির হোটেল।  পকেটের  সামর্থ্য অনুযায়ী নানান ভাড়ার ঘর পাওয়া যাবে। গোকর্ণ-মুরুদেশ্বর-উদিপি  এই রুটে সৈকত বরাবর কর্ণাটকের প্রধান মন্দিরশহর গুলি ঘুরে নেওয়া যায়। গোকর্ণে  মহাবলদেব মন্দির, মুরুদেশ্বরে তিন দিকে আরব সাগর ঘেরা মুরুদেশ্বর  শিবমন্দির  ও উদিপিতে শ্রীকৃষ্ণ মন্দির –  এই তিন মন্দির অবশ্য-দর্শনীয়। মুরুদেশ্বর থেকে স্থানীয় নৌকা  ভাড়া করে নেত্রানি যাওয়া যায়। আসা যাওয়ার ভাড়া মোটামুটি ২৫০০-৩০০০ টাকা  পড়বে। নেত্রানি যাওয়ার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের  থেকে সাম্প্রতিক  খবর  জেনে  নিতে হবে। কারণ ভারতীয় নৌসেনার প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে  দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বন্ধ থাকে।  
        (তথ্য-সুমিত চক্রবর্তী)
  অচেনা সৈকত -কর্ণাটকে কাটলি,  ওম ও প্যারাডাইস সৈকতগুলিতে এখনো ট্যুরিস্টদের পা  পড়েনি বললেই চলে। ওম ছাড়া বাকিগুলিতে যাওয়ার  সেভাবে  কোন  যান চলাচলের রাস্তা-ও নেই। সৈকতগুলি দেখার জন্য নিজেদের  মত করে একটা ছোট্ট কোস্টাল ট্রেকিং রুট তৈরি করে নেওয়া যায়। ট্রেক  শুরু করা যায় গোকর্ণ থেকে এবং শেষ বালেখানে। সমগ্র পথটি পাঁচ-ছ  ঘন্টায় অতিক্রম করা যায়। গোকর্ণে যাওয়ার জন্য  সবচেয়ে ভালো দঃ-পশ্চিম রেলের সদর দপ্তর হুবলি পৌঁছে সেখান থেকে বাসে আঙ্কোলা  যাওয়া। আঙ্কোলা থেকে বাস পরিবর্তন করে গোকর্ণ। টুকিটাকি খাবার ও পানীয় জল  সঙ্গে নিতে হবে কারণ ওম বিচের পর বালেখানি পর্যন্ত হয়তো কোন লোকজন-ই  চোখে  পড়বে না। কিছু-কিছু জায়গায় রাস্তার নির্দিষ্ট কোন রুট নেই – নিজেদের পথ খুঁজে নিতে হবে। যদি “দ্য  বিচ” সিনেমাটি দেখে থাকেন, প্যারাডাইস  বিচ দেখে ঐ ছবিটির কথা মনে পড়বে-ই। পাথুরে সৈকতটিকে ঘিরে রয়েছে বিস্তৃত নারকেল  গাছের বন  আর  জল স্ফটিকের মত স্বচ্ছ। 
       (তথ্য-সুমিত চক্রবর্তী)